মোহাম্মদ সুহার্তো

মোহাম্মদ সুহার্তো ১৯৬৭ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়া শাসন করেন, প্রতিষ্ঠা করেন একটি দীর্ঘস্থায়ী কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা। যদিও তিনি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও স্থিতিশীল নীতিমালার কথা বলতেন, বাস্তবে তিনি রাষ্ট্রপ্রধানের ক্ষমতাকে নিজের ব্যক্তিগত সম্পদ বাড়ানোর যন্ত্রে পরিণত করেন। অনুমান করা হয়, তিনি ছদ্ম-ফাউন্ডেশন ও কথিত দাতব্য সংগঠনের মাধ্যমে প্রায় $৩৫ বিলিয়ন আত্মসাৎ করেন। এত বড় মাত্রার অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি কখনও বিচারের সম্মুখীন হননি। ২০০৮ সালে মারা যাওয়ার পর তিনি একদিকে “জাতির পিতা,” অন্যদিকে দুর্নীতির প্রতীকে পরিণত হন।

ফার্দিনান্দ মার্কোস

ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফার্দিনান্দ মার্কোস ১৯৭২ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত দ্বায়িত্ব পালন করেন, আরোপ করেন সামরিক আইন এবং দেশকে নিয়ে যান এক কর্তৃত্ববাদী পথে। তার শাসনকাল জুড়ে ছিল দমন-পীড়ন, ঘনিষ্ঠদের বাড়তি সুযোগ আর সরকারি অর্থের $৭.৫ বিলিয়নের দুর্নীতি। ১৯৮৬ সালে "পিপল পাওয়ার রেভলিউশন" আন্দোলনের মুখে তিনি হাওয়াই পালিয়ে যান—সঙ্গে নিয়ে যান নগদ অর্থ, সোনা ও গয়না। তিনি ১৯৯৫ সালে নির্বাসনে থাকা অবস্থান মারা যান, আর এখনো তার আত্মসাৎকৃত সম্পদ উদ্ধারের প্রক্রিয়া চলছে।

ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ

ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ ২০০২ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেন। তার শাসনামলে ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং বিতর্কিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ছিল নিয়মিত ঘটনা। ২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে ইউরোমেইদান আন্দোলন শুরু হয়। অবশেষে তিনি দেশত্যাগ করেন। তার কর্মকাণ্ডে প্রায় $৫ বিলিয়ন ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হয়। বর্তমানে তিনি রাশিয়ায় অবস্থান করছেন এবং ইউক্রেনে অনুপস্থিত অবস্থায় দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।

মোবুতু সেসে সেকো

মোবুতু সেসে সেকো ১৯৬৫ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত জাইর (বর্তমানে কঙ্গো গণপ্রজাতন্ত্রী) শাসন করেন, যার পেছনে ছিল শীতলযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন। তার শাসনামল এক নিখাদ লুটপাটের উদাহরণে পরিণত হয়েছিল—রাষ্ট্রীয় বাজেট ছিল তার ব্যক্তিগত সম্পদের উৎস। একদিকে দেশ দারিদ্র্যে ডুবে যাচ্ছিল, আর অন্যদিকে মোবুতু কিনছিলেন প্রাসাদ, ব্যক্তিগত জেট আর প্যারিসে বিলাসী পণ্য। তার দুর্নীতির পরিমাণ $৫ বিলিয়ন বলে অনুমান করা হয়। ১৯৯৭ সালে তিনি ক্ষমতাচ্যুত হন এবং কিছুদিন পর নির্বাসনে থাকা অবস্থায় মারা যান—সেইসাথে, তিনি কখনো বিচারের মুখোমুখি হননি।

সানি আবাচা

সানি আবাচা ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত তেলের বাজারের উত্থানকালে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থাকলেও, তার শাসনকাল আজও বিশাল মাত্রার দুর্নীতির জন্য স্মরণীয়। ভুয়া চুক্তি, অফশোর অ্যাকাউন্ট ও শেল কোম্পানির মাধ্যমে তিনি $২ থেকে $৫ বিলিয়ন আত্মসাৎ করেন। শুধু একটি জার্সি দ্বীপের অ্যাকাউন্টেই $২৬৭ মিলিয়ন চুরি করা অর্থ পাওয়া গেছে। ১৯৯৮ সালে তিনি রহস্যজনকভাবে মারা যান। মৃত্যুর পর বিশ্বব্যাপী তার সম্পদ উদ্ধারের চেষ্টা শুরু হয়, যদিও তাঁর অধিকাংশ অর্থ কোথায় তা এখনও অজানা।

নাজিব রাজাক

নাজিব রাজাক ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ছিলেন এবং আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম বড় দুর্নীতি কেলেঙ্কারি—১এমডিবি স্ক্যান্ডাল—এর কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। এই চুক্তির আওতায় একটি রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল থেকে $৪.৫ বিলিয়ন উধাও হয়ে যায়। তদন্তে দেখা যায়, এর মধ্যে $১ বিলিয়নের বেশি সরাসরি নাজিবের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে গিয়েছিল। ২০২২ সালে তিনি দোষী সাব্যস্ত হন এবং ১২ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন—যা উচ্চপর্যায়ের কোনো রাষ্ট্রনেতার দুর্নীতির জন্য শাস্তি পাওয়ার বিরল উদাহরণ।

স্লোবোডান মিলোসেভিচ

স্লোবোডান মিলোসেভিচ ১৯৮৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত সার্বিয়া ও যুগোশ্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন এবং বলকান যুদ্ধের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিলেন। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের পাশাপাশি তার শাসনকালে ব্যাপক আর্থিক দুর্নীতিও ঘটেছে। তিনি ছায়া চুক্তি ও অফশোর হস্তান্তরের মাধ্যমে প্রায় $১ বিলিয়ন আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ২০০১ সালে তিনি গ্রেফতার হন এবং তাকে হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে হস্তান্তর করা হয়। সেখানে রাজনৈতিক ও আর্থিক অপরাধে বিচার চলাকালে চূড়ান্ত রায় আসার আগেই ২০০৬ সালে তিনি কারাগারে মৃত্যুবরণ করেন।